মাদ্রিদ, ১৩ মে: গোটা জীবনটাই তাঁর তারুণ্যের স্পর্শে সজীব! কৈশরে তাঁর কাছে হার মেনেছে স্প্যানিশ ফ্লু। এখন তাঁর বয়স ১১৩। বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণতম মহিলা তিনি। অন্তত এমনটাই দাবি স্পেনের সংবাদ মাধ্যমের। সেই মারিয়া ব্রানায়াসকে এবার দমাতে পারেনি কোভিডও। মারণ ভাইরাসে প্রবীণ পড়শিদের মৃত্যুমিছিলের মাঝে দাঁড়িয়ে তাঁর গালভর্তি যুদ্ধ-জয়ের হাসি। আর মুখে বলছেন, ‘আমার সুস্বাস্থ্যই আমার অহঙ্কার। আমি ক্রমেই সুস্থ হয়ে উঠছি।’
উত্তরপূর্ব স্পেনের জিরোনা শহর লাগোয়া একটি বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন ব্রানায়াস। দীর্ঘ ২০ বছর এখানেই তাঁর বাস। এই মুহূর্তে জিরোনা শহরও করোনা প্রাদুর্ভাবের একটি অনত্যম অঞ্চল। প্রতিদিনই প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। মারাও যাচ্ছেন অনেকে। তাঁদের মধ্যে সিংহভাগই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে সামান্য সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হন ব্রানায়াস। তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্ট আসে কোভিড পজিটিভ। সেই থেকে চিকিৎসাধীন তিনি। রয়েছেন বৃদ্ধাশ্রমের হোম আইসোলেশনে। বৃদ্ধাশ্রমের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘ব্রানায়াস সুস্থ হয়ে উঠছেন। তাঁর পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তবে এখনও সামান্য কিছু উপসর্গ রয়েছে।
আশা করি, তিনি শীঘ্রই ভালো হয়ে উঠবেন।’ আত্মবিশ্বাসী ব্রানায়াসের মেয়ে রোজা মোরেটও। তাঁর কথায়, ‘মা ঠিক আগের মতোই ফের সুস্থ হয়ে উঠবেন।’
ব্রানায়াসের সুস্থ হয়ে ওঠার লড়াইয়ের একটি ভিডিও ফুটেজও প্রকাশ্যে আসে সম্প্রতি। ব্রানায়াসকে সেখানে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘এখানকার (বৃদ্ধাশ্রম) কর্মীরা অত্যন্ত দয়ালু ও যত্নশীল। আমাকে সর্বক্ষণ আগলে রেখেছেন।’ এক কৌতূহলী কর্মীকেও পাল্টা প্রশ্ন করতে শোনা গিয়েছে সেই ভিডিও ফুটেজে। ব্রানায়াসের কাছে তিনি জানতে চাইছেন, ‘আপনার এই সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবনের আসল রহস্য কী?’ উত্তরে ব্রানায়াসের মন্তব্য, ‘আমি অত্যন্ত ভাগ্যবতী। সর্বদাই হাসিখুশি থাকি। সেটাই সুস্বাস্থ্যের মূল চাবিকাঠি। আর এই সুস্বাস্থ্যই আমার অহঙ্কার।’
আজ বলে আজ নয়। ব্রানায়াস এই অহঙ্কার বয়ে বেড়াচ্ছেন সেই এগারো বছর বয়স থেকে। ১৯০৭ সালের ৪ মার্চ জন্ম আমেরিকায়। বাবা ছিলেন সাংবাদিক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি মার্কিন মুলুক ছাড়েন। পরিবারকে নিয়ে চলে আসেন স্পেনে। ১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লুয়ের প্রাদুর্ভাব ঘটে স্পেনজুড়ে। ব্রানায়াসও সেই মারণ ফ্লুয়ের কবলে পড়েন। দীর্ঘ চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। তখন আজকের ব্রানায়াস সবে কৈশরে পা রেখেছেন।
বয়স ছিল মাত্র এগারো। স্পেনের সংবাদ মাধ্যমের খবর, সেই থেকে ব্রানায়াস খুব গুরুতর কোনও রোগে ভোগেননি। ১১৩ বছর বয়সে এসে কোভিডের মুখোমুখি হলেন তিনি। এবং হারিয়েও দিলেন এই মারণ ভাইরাসকে। ২৭ হাজারের মৃত্যু তালিকা নিয়ে ব্রানায়াসকে এখন কুর্নিশ জানাচ্ছে গোটা স্পেন।