[ad_1]
ওমর ফারুক হিমেল, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে
বাংলাদেশে আটকেপড়া প্রবাসীদের দেশে ফেরাতে কাজ করছে দূতাবাস। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় ছুটিতে গিয়ে প্রায় ৩০০ প্রবাসী আটকে পড়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের এমন উদ্যোগকে আশার আলো বলছে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস।
এসব প্রবাসীদের কোরিয়ায় পাঠাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বোয়েসেল ও বাংলাদেশ দূতাবাস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সিউল বাংলাদেশ দূতাবাস সম্প্রতি আটকাপড়া প্রবাসীদের নাম ঠিকানাও সংগ্রহ করেছে।
ছুটিতে গিয়ে আটকেপড়া এক প্রবাসী বলেন, ‘আমরা করোনাভাইরাসের কারণে বিপাকে পড়েছি। না পারছি ঘর থেকে বের হতে না পারছি নিত্যদিনের কাজ চালিয়ে যেতে। বর্তমান পরিস্থিতেতে সারাবিশ্বে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে রয়েছে। মানুষ কোয়ারেন্টাইনে কিংবা আইসোলেশনে থাকবে এমনটা ভাবিনি’।
তিনি বলেন, ‘কোনোরকম প্রস্তুতি না নিয়ে দেশে এসেছিলাম। বিশ্বের নানা প্রান্তে, নানা দেশে। আমাদের মতো প্রবাসীরা ছুটিতে দেশেই এসে আটকা পড়েছে। কীভাবে চাকরি বাঁচাব, বিশ্ববিদ্যালয় সেশনের কী হবে কিছুই বুঝছি না। এখন আমরা খুবই চিন্তিত, আতঙ্কিতও’।
সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম বলেন, ‘দূতাবাসের অনুরোধে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিছুদিনের মধ্যে চার্টার বিমানে তাদের সবাইকে কোরিয়ায় আনার ব্যবস্থা করছে সরকার। আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে সরকার। এই দু:সময়ে কিভাবে আনা যায় সেটিই দেখছে। দূতাবাস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে’।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিস্তৃত হওয়ার মুখে বিমান চলাচলসহ অন্যান্য যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হঠাৎ করেই তারা ভিন্ন এক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আটকা পড়ে গেছেন। তাদের মধ্যে কোরিয়া প্রবাসী রেমিট্যান্সযোদ্ধা ও শিক্ষার্থীরা রয়েছে’।
আটকেপড়া শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল ফারুক জানান, বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগটি ছিল খুবই সময়োচিত। এই সুসংবাদ আমাদের অনেকের মনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। আশা করছি আমরা শিগগিরই কোরিয়া যেতে পারব।
ইপিএস কর্মী মাসুদ রানা জানান, দেশে ছুটিতে এসেছি এক মাসের জন্য। এখন প্রায় তিনমাস হতে চললো। কখন যাব সে চিন্তায় আছি। সরকার আর দূতাবাস যদি আমাদের সহযোগিতা করে আমরা উপকৃত হব।
বৃহস্পতিবার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছেন, যে কোনো বিমানের একটি চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে আটকেপড়াদের কোরিয়া পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আশা করি কোরিয়াপ্রবাসীরা যেতে পারবেন। কয়েকদিন ধরে এসব প্রবাসীদের আকুতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা দক্ষিণ কোরিয়ায় ফিরতে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাস দিয়েছে। সেটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘বাংলাদেশে আটকেপড়ারা কোরিয়া ফিরে যাওয়ার জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছি, আমরা নিজ দেশে এসে আটকে পড়েছি প্রায় ৩০০ জন ইপিএসকর্মী ও ১৫০ জন শিক্ষার্থী। দেশে বসে কোরিয়ায় আমাদের বাসা ভাড়া, কারেন্ট বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে প্রায় ৩ মাস থেকে, দেশে এসে আটকে পড়া প্রায় সবার ৩ অথবা ৪ মাস চলছে ছুটির মেয়াদ। আমাদের কোম্পানির মালিক আমাদের চাপ দিচ্ছে, কখন যাব কোরিয়া এই বলে’।
‘আমরা বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করেছি। এখন পর্যন্ত আমাদের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। বেশ কিছুদিন আগে দূতাবাস একটি নোটিশে জানিয়েছেন, বোয়েসেল আমাদের জন্য কাজ করছে। আমরা বোয়েসেলে যোগাযোগ করেছি। জানতে চেয়েছি আমাদের ফ্লাইটের জন্য কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বোয়েসেল থেকে আমরা তা এখনো কিছু জানতে পারিনি’।
‘আমার উপার্জনের উপর নির্ভর করে পরিবার চলে। কোরিয়া কখন যাওয়া হবে সেদিকে তাকিয়ে আছে বাড়ির সবাই। আমরা দেশে যে পরিমাণ অর্থ নিয়ে এসেছি তা শেষ হয়ে আসছে আমাদের এই মুহূর্তে কী করা উচিত বুঝতে পারছি না।’
‘সরকার থেকে আমাদের জন্য একটি বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করার জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছি, আমরা নিজ খরচে কোরিয়াতে যেতে চাই, সরকার শুধু আমাদের একটি বিশেষ ফ্লাইটে ব্যবস্থা করে দেবেন আমরা অনুরোধ করছি’।
আজ দূতাবাসের ফেসবুক পেজে জানানো হয়, সম্প্রতি বাংলাদেশে অবস্থানরত দক্ষিণ কোরিয়ায় ফিরে আসতে ইচ্ছুক ইপিএস কর্মী, শিক্ষার্থী এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিক যারা দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছুক তাদের অনেকেই সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করে বিমানের বিশেষ ফ্লাইট সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন।
সকলের সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, অনিবার্য কারণবশতঃ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কোন ফ্লাইট দক্ষিণ কোরিয়ায় আসতে পারছে না। তবে বাংলাদেশে অবস্থানরত ইপিএস কর্মী ও শিক্ষার্থীদের দক্ষিণ কোরিয়ায় ফিরিয়ে আনার জন্য সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বোয়েসেল এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় একযোগে প্রচেষ্ঠা গ্রহণের ফলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বিস্তারিত তথ্য শিগগিরই জানানো হবে।
এমআরএম/পিআর
[ad_2]